হাসন রাজা বাংলার লোক মরমি গানের জগতে প্রধানত: একজন দার্শনিক কবি। মানব জীবনকে তিনি গভীরতম উপলদ্ধি থেকে বুঝার চেষ্টা করেছেন। নিজের ভেতরের খবর নিতে গিয়ে পরমজ্ঞান প্রাপ্তি তার দর্শনের মূল ভিত্তিপ্রবাহ। হাসনরাজা জন্ম নিয়েছেন লক্ষনশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে। বর্তমান সুনামগঞ্জে পুরো শহরটাই ছিল এই পরগনার অন্তর্ভূক্ত আর হাসনরাজার বিখ্যাত জন্মভিটে বাড়িটি এই শহরের তেঘরিয়া মহল্লাতেই অবস্থিত। ১৮৫৪ সালের ২১ডিসেম্বর তারিখে তার জন্ম। তার জন্মের পেছনে ছিল তার মায়ের জীবনের একটি প্রেক্ষাপট। হাসনরাজার মা হুরমতজান বিবির অল্প বয়সে বিয়ে হয় তেঘরিয়া গ্রামে। তার স্বামী আমির বক্স চৌধুরী খুব শখ করে ভাটি অঞ্চলের মোঘল প্রতিনিধি লম্বুধরের বংশে বিবাহ করেন। পীর সন্যাসী অনুরাগী আমির বক্স চৌধুরীর এক মেয়ে সাওয়ারী বানু ও তিন ছেলে সিকান্দার বখত, রেজওয়ান বখত ও সৈয়দ বখত সন্তানদের কলেবরে সেই সংসারে সুখের যেনো সীমা ছিলো না। কিন্ত একদিন হিন্দুস্থানী এক ফকির হাজির হলে তেঘরিয়া চৌধুরী বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের ধুমধাম পড়ে যায়। ফকির দাবি করলো সিকান্দর বখতের প্রিয় তাজি ঘোড়াটি নিয়ে যাবে। আমির বক্স চৌধুরী স্ত্রী হুরমতজানের পরামর্শ চাইলেন। শেষে ঘোড়াটি না পেয়ে ফকির ভীষন রুষ্ট হলো এবং অন্য কোন কিছু বদলা নিতে নারাজ বলে বিদায় নিলো। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই দেখা গেল হুরমতজান বানু ও আমির বক্স চৌধুরীর তিন পুত্র ও এক কন্যা পরলোকে পাড়ি জমায়। শোকে মুহ্যমান হয়ে এর কিছুদিন পরে আমির বক্স চৌধুরী সন্তানদের অনুসরন করেন এবং তার প্রানপ্রিয় স্ত্রীকে বিধবা বানিয়ে ইহকাল ত্যাগ করেন।
সন্তানহারা স্বামীহারা হরমুতজজান বিবির দিশেহারা অবস্থায় বড় ভাই তোরন মিয়া ওরফে ইমদাদ আজিজ চৌধুরী বোনকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে আরেকটি বিয়ের সম্বন্ধে রাজী করান। হুরমত জান তার ৩৫ বছর বয়সে স্বামী আমির বক্স চৌধুরীর আপন খালাত ভাই আলী রাজার সাথেই দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হন। আর তারপরেই যার জন্ম হয় তিনিই হলেন আমাদের সকলের প্রানপ্রিয় মরমী কবি হাসনরাজা।
খালাত ভাইভাই সম্পর্ক ছিলো বলে প্রথম স্বামীর বাড়িতে হুরমতজান বাকি জীবনটা কাটাবেন বলে দ্বিতীয় স্বামীকে অনুরোধ করলেন। অনুমতি পেয়ে অধুনা সুনামগঞ্জ জেলার লক্ষণশ্রী পরগানর তেঘরিয়া গ্রামে তার পরবর্তী চিরকালটাই অতিবাহিত হয়। আর সেই সুত্র ধরেই ১৮৫৪ সালে সুনামগঞ্জের তেঘরিয়ার বাড়িতে তার গর্ভে জন্মলাভ করেন তার একমাত্র পুত্রধন হাসনরাজা। রাজার পৈত্রিক স্থান অধুনা বিশ্বনাথ উপজেলার অন্তর্গত সাবেক কৌড়িয়া পরগনার রামপাশা এলাকা বিধায় সেখানেও ছেলেবেলা থেকেই বাবা ও বৈপত্রিক বড়ভাই এর পাশেপাশে কাপনা নদীর কিনারা ধরে ঘুরাঘুরি করতে থাকেন । লক্ষনশ্রীতে অতি ছেলেবেলা থেকেই এক পরম নান্দনিক নিঃসর্গ প্রকৃতির মাঝে আপ্লুত হয়ে থাকেন হাসন রাজা । প্রকৃতিপ্রেমী বালক হাসন চষে বেড়াতে থাকেন নদী-নালা-খাল-বিল-হাওড়-জঙ্গলে। সুনামগঞ্জের অনাবিল প্রকৃতির মাঝে তার কোড়া পাখী, দোয়েল, ময়না, সারস, মুনিয়ার পিছনে ছুটতে থাকেন। বাশ কাঠ ছন আর মাটির তৈরী কাচা ঘরে তার ছেলেবেলা ছিল এক অফুরন্ত আনন্দময় সময়। গ্রামের আর ৮/১০টি সাধারন খেলার সাথীদের নিয়ে দৌড়ঝাপ, নদী পুকুরে সাতারকাটা, ভেলায় চড়া, ঘুড়ি ওড়ানো, লুকোচুরি ইত্যাদিতে তার সীমাহীন আমোদফুর্তি। কিন্তু একদিন যখন হাসন রাজা বয়স ১৩/১৪ তে এসে পৌছলেন, তখন তিনি মায়ের কাছে এসে দাড়ালেন এবং স্বভাবগত কারনে মাকে প্রশ্ন করলেন ‘তাকে নিয়ে মার এত চিন্তা, এত ভাবনা কিসের?’ তখনই জানলেন- মায়ের গর্ভ হতে আসা আরো চার সন্তান আর খানিক পর তার স্বামী হারানো হুরমতজান বানুকে কতখানি কষ্ট দিয়েছে। এতে হাসন রাজার মনের উপর এক বিরাটরকম শোকের ছায়া পড়ে। এই জগতে মানুষের স্বল্পকালের আসা যাওয়া, তার সাথে স্বজনের কষ্ট আর ¯্রষ্টার সৃষ্ট প্রকৃতির অনিন্দ সৌন্দর্য্য - এই তিন মিলিয়ে আল্লাহর লিলাখেলার খবর পেয়েছেন হাসন রাজা। এ পর্যায়ে হাসন রাজা মৃত্যুকে জয় করেছেন।
হাসন রাজা গান গাইলেন:
আমার হƒদয়েতে শ্রীহরি,
আমি কি তুর যমকে ভয় করি
শত যমকে তেড়ে দিব, সহায় শিব শঙ্করী ॥
আমি যখন উঠি রেগে, দেখে যমদূত ভাগে
আসে না মোর মায়ের আগে, দেখ যেয়ে লক্ষণশ্রী ॥
হাসন রাজার সন্ধান আছে, যম কি আসবে তার কাছে
প্রাণ দিয়েছি হরির কাছে, যম কারে নিবে ধরি ॥
ছেলেবেলা থেকে হাসন রাজার দুরন্তপনাময় জীবনের চাঞ্চল্য দেখে বাবা মুগ্ধ হন এবং ছেলেকে সিলেট শহরস্থিত একমাত্র মাদ্রাসায় প্রাথমিক পাঠাভ্যাসে পাঠিয়ে দিন। কিন্তু মা চেয়েছিলেন জমিদারি পরিচালনায় দলিল দস্তাবেজ এবং বিষয় আশয় সম্পর্কে তার ছেলে যেনো সম্যক জ্ঞান আহরন করে। তাই তিন চারেক বছর পরেই মাদ্রাসা জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে বালক হাসন সুনামগঞ্জের মায়ের কাছে ফিরে আসেন। সে সময় এ অঞ্চলে ইংরেজীর প্রচলন একেবারেই ছিলো না, এমন কি বাংলা পড়ালিখাও একেবারে দূর্লভ ছিলো। কিন্তু অবস্থাপন্ন মুসলমান সমাজে আরবি, ফারসি শিখার রেওয়াজ ছিলো বলে নিজ বাড়িতে হাসন রাজা গৃহ শিক্ষকের কাছে পারিবারিক ঐতিহ্য স্বরুপ আরবি, ফারসি ও বাংলা ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। সৈয়দপুর নিবাসী আদম খান নামক এক মৌলভির কাছে আরবী, বুগদাদি কায়দা ও কোরানুল করীম এর পাঠ নেন। স্বভাগ-কবি হাসন রাজা ১৩ বা ১৪ এর অল্প বয়স থেকেই পাখি, পশু ও মানুষকে নিয়ে ত্রিপদি ছড়া লিখতে শুরু করেন।
উচা লম্বা কোড়া ভালো সকল কোড়া হইতে
বাট্টী কোড়ার কথা কহি না পারি আর সইতে ॥
নিচা কুড়া ভালো নয় শুন মমিন ভাই
পানিতে মাইরে ভাগিয়া যায় সর্বদাই ॥
গাট্টা মোটা কোড়া যদি নিচা বাট্টী হয়
পানির মাইরে হারিয়া যায়, জানিও নিশ্চয় ॥
ছোট কোড়া যদি উচ্চা লম্বা হয়
পানির মাইরে তাহার যে, নাই কোন ভয় ॥
মধ্যম কোড়া ভালো, শিকার হয় অধিক।
কোন কোড়া ভালো নয় উচার মতাবিক ॥
লাল রঙ্গের কোড়া ভাই, অতিশয় উত্তম
লাল রঙ্গের কোড়া পাইলে, মনে নাই গম ॥
ইতোমধ্যে হাসন রাজা কৈশোর ছাড়িয়ে যৌবনে ছুই ছুই অবস্থায় তার চেহারা-সৌষ্টবে যেনো উপছে পড়ার মতো সুন্দর্য্য। প্রকৃত একজন রাজপুত্রের মতোই এমনই চেহারা যে হাজারো লোকের মাঝে সর্বাগ্রে দৃষ্টি পড়তো তাঁর উপর।
১৮৭০ সন। হাসন রাজার বয়স মাত্র ষোল। তখনো তার জীবনে তিনজন মানুষ অভিভাবক হয়ে তার কাছে কাছে চারপাশ ঘিরে আছেন তার বাবা, মা এবং তার বৈমাত্রিক বড় ভাই উবায়দুর রাজা। সেদিন মা তেঘরিয়ার বাড়িতে চার দেয়ালের ভিতরে তার ঘরের দৈনিন্দিন কাজে ব্যস্ত আর ওদিকে বাবা এবং বড়ভাই বিশ্বনাথে রামপাশার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ফুলে ফাপা বর্ষার দিনে হাসন রাজা তার নৌকাখানি ভাসিয়েছেন সুরমার জলে। ভাসতে ভাসতে পশ্চিমমূখী তার নৌকাখানি যখন পার্শবর্তী হিন্দু জমিদার বাড়ির কাছে এসে পৌছলো, শান বাধানো একটি ঘাটের নিকটবর্তী হতেই ১৪ বছরের এক অতি সুন্দরী বালিকাকে দেখে তিনি অভিভূত হন, আকৃষ্ট হন। ১৬ বছরের যুবক হাসন রাজা মায়ের কাছে ফিরে আসেন এবং হিন্দু জমিদার কন্যার কথাটি পাড়লেন। কিন্তু হিন্দু মুসলিম উভয় গার্ডিয়ান পর্যায় থেকে সেই অনুভূতির প্রশ্রয় পেলো না। চিরকালের জন্যে হাসন রাজার সেই অনুভূতিটি সুপ্তই রয়ে গেলো।
এর বর্হিপ্রকাশ পাই তার একটি গানে:
ঝলমল ঝলমল করে তাঁরা ঝলমল ঝলমল করে
নূরের বদন সই প্রেয়সি নূরের বদন সই
তারে ছাড়া বাড়িত আমি কেমনে করে রই।
ওরে আমার আড়িপড়ি ভাই
তারে আমার প্রানের মাঝে চাই
হিন্দু আর মুসলমান আমি কিছু বুঝি নাই।
পরের বছর ১৮৭১ সালে হাসন রাজা সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীর বাড়িতে যখন তার বাবাসহ অবস্থান করছিলেন, সেই সময় খবর আসলো তার বৈমাত্রিক বড়ভাই খূবই অসুস্থ সয্যায় শায়িত। রামপাশা গেলে পরে বড়ভাই উবায়দুর রাজার মৃত্যু হাসন রাজা ও তার বাবাকে ভাবিয়ে তুলে। সেই শোক পোহাতে না পোহাতে ৪০শা শির্ণির দিনে বাবা আলী রাজাও মৃত্যুমূখে পতিত হন।
হাসন রাজা নিজেই তার নিজের অভিভাবক হয়ে উঠলেন তখন। ইতোমধ্যে হাসন রাজা ২০ বছর বয়স থেকে তার প্রথম স্ত্রী ঘরে তুলে নিয়ে এলেন। এই বিয়ের পালা শুরু থেকে তিনি জীবনে নয় খানা স্ত্রী ঘরে তুলেছিলেন। দুই খানা বিয়ে পরপর ভেংগে যায়। হৈই-হুল্লুর, কোলাহলমূখর গান বাজনার বাড়িতে ঠিকে থাকবার জো ছিলো না। সেহেতু তালাক প্রাপ্ত হন। আর বাকী সাতজনের তিনজন স্ত্রী পরপর অসুস্থতার কারনে মারা যান। সারা সিলেটে একজন ডাক্তার ছিলো না বলে চিকিৎসার অভাবে এই স্ত্রীদের অনেকের অকাল মৃত্যু এক সুদুরপ্রসারী মরমি ভাবনায় নিয়ে আসে তাকে। তার সর্বশেষ স্ত্রী লবজান চৌধুরীকে বিয়ে ১৮৫ সনে। তার গর্ভেই হাসন রাজার সর্বকনিষ্ট পুত্র আফতাবুর রাজা যিনি আমার দাদা। তাই হাসন রাজার এই স্ত্রীপুত্র পরিজন আর বংশধররা সাক্ষ্য দেন হাসন রাজার জীবন কোনসময় উছৃংখল, অত্যাচারী অবিচারী ছিলো না। প্রকৃত অনুসন্ধান, গবেষনা হয় না বলে হাসন রাজার পুত্র পরিজনের কাছ থেকে কিছু জানার আগ্রহ কারো নেই।
১৮৯৭ সালে হাসন রাজা এক বিশাল ভূমিকম্পের মূখোমূখি হন। সারা আসাম সিলেট জোরে ৮.৮ স্কেলের ভূকম্পনে ধ্বংশের লীলাখেলায় হাসন রাজা তার শ্রষ্টার অস্থিত্ব খুজে পান। তার অন্তরাত্মা কেপে উঠে। তার গানে তিনি উল্লেখ করেন এই ভূমিকম্পনের বেলাতেই তিনি তার কাছে যেতে পেরেছিলেন, আবার তার সাথে দেখা হয়েছিলো, তার রুপ দেখলেন, ঝলক দেখলেন, তাকে আবারো জড়িয়ে ধরলেন, তার মধ্যে বিলীন হয়ে গেলেন। গানে বলেছেন:
বৈশালের বৎসরে বন্ধে দরশন দিলরে
দয়া করিয়া আমার সংগে কথাবার্তা কইলোরে
আইলো রে আইলো রে বন্ধু আইলো রে
চান্দমূখ দেখিয়া হাসন রাজা পাগল হইলো রে।
১৯০৪ সালে যখন রাজামাতা হুরমুতজান বানু ইহলোক ত্যাগ করলে মৃত্যুকাতর হাসন রাজা সময়কে অনুধাবন করলেন অন্তরের অন্তস্থল থেকে। দিনের প্রথম প্রহরে সেই অজানাটি তার বোধশক্তিতে ধরা দিলো। গান গাইলেন:
বাপ মইলা ভাইও গো মইলা আরো মইলা মাও
এব কিনা বুঝলায় রে হাসন এ সংসারের বাও
দিন গেলো হেলে খেলে রাত্রি গেলো নিন্দে
ফজরে উঠিয়া আমি হায় হায় করে কান্দে।
জীবনের এতোগুলো অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে হাসন রাজার সত্যের সন্ধানে ব্যস্ত ছিলেন। জীবনকালের এই সামান্যতম সময়ের আবর্তে থেকে হাসন রাজা মহাকালের খবর পেয়েছিলেন। শ্রষ্টা সৃষ্টির মাঝে তিনি এক নির্্ংকুশ বন্ধনের পরিচয় পেলেন। যেদিকে তাকালেন সেখানেই তার পরম প্রেয়সীর সন্ধান মিললো। সমস্ত জসৎব্যাপি যেনো তার অস্থিত্ব বিরাজমান।
লক্ষ্য করার মতো ১৭ বছর বয়সে যখন হাসন রাজা বাবা ভাইকে দেড় মাসের ব্যবধানে মৃত্যুমূখে হারান, তখন তিনি মসজিদমূখি হয়ে উঠেন। নামাজের একাগ্রতা খুজে পাবার চেষ্টা করেন। গান থেমে নেই । গাইলেন:
নমাজ পড়, নমাজ পড় ভাই, মুমিন নমাজ পড়
একমনে নমাজ পড়, চিত্ত ধরিয়া পড়।
নমাজ পড় রোজা রাখ একমনে
মাবুদআল্লাহ জানিও যে তোমার সামনে।
সাক্ষাতে আল্লাহতালা ধরাইও দীলে
কবুল হইবে নমাজ তোমার সিজদা করিলে ॥
নমাজ পড়, রোজা রাখ, কর এবাদত
মমিন মুসলমানের ভাই মুল এই পথ ॥
হাসন রাজায় সেলাম দেয়, নমাজি সব ভাই
নমাজ রোজা ছাড়িও না আল্লার দোহাই ॥
পাঁচ ওয়াক্ত নিয়মিত নমাজ পড়তে থাকলেন হাসন রাজা কিন্তু পাশাপাশি শত নমাজিদের মধ্যে মৌলিক সমস্যা দেখে তিনি হতবাক হলেন। নমাজিদের উদ্দেশ্য করে তিনি জানালেন:
মুমিনেরা ভাই, ভাইরে ইমান রাখিও ধর
ইমান না রাখিলে মুমিন কিসের নমাজ পড়।
এক আল্লা বিনে রে শরিক নাহি তাঁর
লা শরিক জানিলে মমিন হইবায় উদ্ধার ॥
লা-ইলাহা ইল্লাহল্লাহু জানিবায় সার
মোহাম্মদ মুস্তফা নবী রছুল আল্লাহর ॥
ঈমান রাখি, ভাব রাখিও, আর রাখিও ভক্তি
ঈমানে মরিলে মমিন পাইবায় মুক্তি ॥
হাসন রাজায় ভিক্ষা চায় আল্লা ঈমান তোমার ঠাঁই
জান বাহির হইতে যেন, তোমায় দেইখ্যা যাই ॥
এইভাবে একনাগারে বছর আটেক নমাজি থাকার পর হাসন রাজা নমাজ কায়েম করার জামাতি পরিবেশের অভাব বোধ করলেন। লক্ষ্য করলেন নমাজিদের মৌলিক সমস্যাটির কারনেই তারা মসজিদে নমাজে আসেন বেহেস্ত লাভ করার লোভে, আর সাথে সাথে মসজিদ হতে বেরিয়ে সেই একই নমাজি দোজক লাভের উদ্দেশ্যে ঐ একই অপারপর মুমিনদের মন্দ গাইতে, মন্দ চাইতে ব্যস্তসমস্ত হয়ে উঠেন। হাদিস অনুযায়ী পরের মন্দ চাইলে দুজকবাসী হতে হয়। হাসন রাজা একই মানুষের মাঝে এরকম মুনাফিকি অবস্থা দেখে ক্ষুদ্ধ হন। তিনি বললেন মুমিনরা সবদিকে চোখ তুলে তাকান তাইলে দেখতে পাবেন মহাসত্যকে:
হাসন রাজায় কয়,
নমাজ রোজা ছাইড়া দিছি বেহেস্তে যাইবার ভয়
নমাজ রোজা করলে বেহেস্তে যাইবে রে নিশ্চয় ॥
পরের মন্দ ছাড়িয়াছি দুজখেরি ডরে
বেহেস্ত-দুজখ এরাফাতে নিওনা গো মোরে ॥
বন্ধু তোমায় ছাড়বো না গো এই মনে কয়
চরণ ধরিয়ে থাকি আমি, এই মনে লয় ॥
বন্ধু ছাড়িয়ে থাকতে নারি প্রানে নাহি সায়
তিলেকমাত্র মাত্র না দেখিলে মনপ্রান দায়।
নাচে নাচে হাসন রাজা দেখিয়া জগতময়
পুরাও আকাক্সক্ষা তোমার অঙ্গে করিয়ে লয় ॥
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রীক দর্শন, পারসিয়ান দর্শন, ইউরোপিয় দর্শন খুজে নিলেন, পেয়ে গেলেন অনেক অনেক বড় বড় দার্শনিকগনকে। কিন্তু কবিগুরু জানতেন না তার ঘরের পাশে সুনামগঞ্জের অজপাড়াগায়ে লুকিয়ে আছেন এক বিশ্বয়কর দার্শনিক। অভিভূত হয়েছেন তার গানের দর্শনের পরিচয় পেয়ে। মাটির মানুষের আসা আর যাওয়া, ঘর বানানো আর ঘর ভাংগা এই খেলার মাঝে যেনো মহাসত্য শ্রষ্টার অস্থিত্ব বিরাজ করছে। তিনি বিশ্বিত হয়ে হাসন রাজার এই গানটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে বৈদিক মহাঋষির সাথে তুলনা করলেন:
বিচার করি চাইয়া দেখি সকলেই আমি
সোনা মামি, সোনা মামি গো
আমারে করিলায় বদনামি ॥
মরণ জিয়ন নাইরে আমার, ভাবিয়া দেখ ভাই
ঘর ভাঙ্গিয়া ঘর বানানি, এই দেখিতে পাই ॥
পাগল হইয়া হাসন রাজা, কিসেতে কি কয়
মরব মরব দেশের লোক, মোর কথা যদি লয় ॥
জিহ্বায় বানাইয়া আছে, মিঠা আর তিতা
জীবের মরণ নাই রে, দেখ সর্বদাই জীতা ॥
আপন চিনিলে দেখ, খোদা চিনা যায়
হাসন রাজায় আপন চিনিয়ে এই গান গায় ॥
সেই বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ‘আমি’ এর অবস্থান যখন এক উচুস্তরের দর্শন পর্যায়ে হাসন রাজার জাগতিক ‘আমি’ সত্ত্বা বিনাস লাভ করে তখনই জগৎময় বাস্তব মহাসত্য শ্রষ্টার অস্থিত্ব প্রতিভাত হয়ে ধরা দিয়েছে তার চোখে । অন্তর্নিহিত সেই প্রসারিত দৃষ্টিকে সামনে রেখে তিনি গেয়ে উঠলেন:
প্রাণরে মিছে বলি আমি আমি
ভাবনা চিন্তা করিয়া দেখি সকলেই তুমি ॥
তুমি ঘরে তুমি বাইরে তুমি অন্তর্যামী
মিছামিছি এদিক সেদিক কেন আমি ভ্রমি ॥
তুমিই জগতের কর্তা তুমি জগৎস্বামী
হাসন রাজা লোকে বলিয়া করিল বদনামি ॥
সেই নিজেকে চিনার ক্ষমতা ধারন করে হাসন রাজা মানুষের মাঝে বোধশক্তিতে প্রধান হয়ে দাড়িয়েছিলেন। মানুষের মর্যাদা হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন। প্রকৃত মানুষের শ্রেষ্টত্ব ঘোষনা করেছিলেন।শুধু মানুষের উপকার বিনে আর কিছু নেই সে-ই শুধু মানুষের জীবনসারে সার্থক। হাসন রাজা গেয়েছেন:
কেন যে আসিলায় ভবে, মানুষ যদি হইলায় না
মানুষ কেন হইলায় নারে, পরের কার্য করলায় নারে ॥
মানুষেরি কার্য এই শুন বলি ভাই
মানুষের উপকার বিনে আর কিছু নাই রে ॥
হাসন রাজার মনের মাঝে নয়রে কেহ পর
পরোপকার কর যত, মন্দ কারো কর নারে ॥
তাই বলতে হয় সেই বিখ্যাত কথা “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”। এ কথার সাথে হাসন রাজা একাত্ম আছেন বলেই মানুষের মর্যাদায় মানুষকে বসিয়েছেন, সেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ হয়ে উঠেছে সত্য। সেই মানুষের শ্রষ্টাকে চিনতে পেরে তিনি তার গানে তার নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন:
হাছন রাজায় কয়, আমি কিছু নয়রে, আমি কিছু নয়
অন্তরে বাহিরে দেখি কেবল দয়াময় ॥
প্রেমেরি বাজারে হাসন হইয়াছে লয়
তুমি বিনে হাসন রাজায়, কিছু না দেখয় ॥
প্রেম জ্বালায় জ্বলি মইলাম, আর নাহি সয়
যে দিকে ফিরিয়ে চাই, বন্ধু দয়াময় ॥
তুমি আমি, আমি তুমি ছাড়িয়াছি ভয়
উন্মাদ হইয়া হাছন, নাচন করয় ॥
আরেকটি গানে তিনি একইভাবে গর্ভ-ভরে তার নিজের পরিচয় লোকেদের কাছে তুলে ধরেছেন:
লোকে বলে, লোকে বলে রে হাসন রাজা তুমি কে?
আমি যে মাবুদের খেলা বানাইয়াছে সে ॥
আমারে বানাইয়া মাবুদ, অন্তরেতে থাকে
অন্তরে থাকিয়া আল্লা, সয়েয়াল সংসার দেখে ॥
আমি যে মাবুদের খেলা, বানাইয়াছে সে
আল্লা বিনে দুই নাই, আছে সবে মিশে ॥
এক বিনে দুই নাই, হাসন রাজা হাসে
আল্লা আমি দুই নই, পাগল লোকে দোষে ॥
আর সেই আত্ম-উপলদ্ধিতে ভরপুর কবি হাসন রাজা তার শ্রষ্টাকে কাছে পেয়েছেন, তার শ্রষ্টার নাম দিয়েছেন হাসন জান কিংবা দিলারাম। হাসন তার নিজের নামের একটি অংশ। সমস্ত ভারত জুরে প্রিয়জনের ক্ষেত্রে ‘জান’ শব্দটি বহুল প্রচলিত আরেকটি শব্দ। তার নিজের নামের সাথে ‘জান’ শব্দটি যুক্ত করেই তিনি তার পরম উপাস্য শ্রষ্টার নাম দিয়েছেন ‘হাসন জান’। পাওয়ার আকাংখায় কাংগালী হয়ে তিনি তার আরাধ্য পরম প্রেয়সী শ্রষ্টাকে দিলের অতি নিকটে স্থান দিয়েছেন আর সেহেতু দিলের মাঝে এত শান্তি আর আরাম। তাই তার অন্য নাম দিলারাম। কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, শ্রষ্টাকে সর্বনামে সর্বাকারে পাওয়ার আকাংখায় তিনি ফানাফিল্লাহ।
এ প্রেমের প্রতিক্রিয়াতে প্রেমিক হাসনরাজা অতিশয় স্পষ্ট করে বুঝেছেন -
পিরীতের মানুষ যারা, আউলা ঝাউলা হয় যে তারা
হাসনরাজা পিরীত করিয়া, হইয়াছে বুদ্ধি হারা ॥
পিরীতের এমনি ধারা, মনপ্রাণ করেছে সারা
আরও করে কারা কারা, লাগল যারা পিরীতের বেড়া ॥
এরকম প্রেমতত্ত্ব পরিচয়ে হাসনরাজার কাছে প্রেমের এমন একটি শক্তি রয়েছে, যার কার্যকারিতায় দেহ ও মন উভয়েই বিনষ্ট হয়। তবে এ বিনাশের অর্থ ব্রহ্মে বিলীন হওয়া বা মহাশূন্যে নির্বাণ লাভ নয়। এর সহজ অর্থ কামনা-বাসনার পরিসমাপ্তি। এ স্থলে তথাকথিত দেহের সঙ্গে সর্বতোভাবে বিজড়িত নফসের বিনাশ। এ প্রসঙ্গে সেক্সপিয়র বলেছেন-
ÔThe Lunatic, the lover and the poet
Are of imagination all compact
তাই হাসন রাজার বেলায় বাড়িয়ে বলার কিছুই নেই। তার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার ফসলই তার গান । আর এই গানই আমাদের দেশ ও জাতীকে নৈতিক ও মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পারার সুযোগ দিতে পারে। হাসন রাজার মতো আমরাও সময়কে উপলদ্ধি করতে পারি। হাসন রাজা এ উদ্দেশ্যে বলেছেন:
দুনিয়া দুনিয়া করিয়া হইছে, শয়তানের চেলা
কেমনে কারে ঠগাইব, এই তাদের খেলা ॥
হাসন রাজায় কান্দন করে, লোকের লাগিয়া
সকলকে তরাও গো প্রভু সুমতি দিয়া ॥
কত মতে বুঝাইলাম নাহি হয় হুশ
কারে কি বলিব আমার কপালেরই দোষ ॥
হাসন রাজা কান্দন করে, ধরিয়া প্রভুর পাও
লোকের বদলা মারিয়া মোরে, সকলকে তরাও ॥
হে প্রভু তুমি আমাকে তুলে নাও, লোকের বদলা আমাকে মরন দাও, তবুও প্রভু, আমার দেশ জাতি, লোকালয়, মানবগুষ্টিকে জানিয়ে দাও , সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে, সেটা হাজার বছর শত বছর নয়, সেটা মাত্র কটা দিন মাত্র। এখানে টগাটগি চলে না, মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়াঝাটি চলে না, এমন কি পাহাড়সম ধনদৌলত বা সম্পদ গড়ে তুলার দুর্নিবার দুর্নিতি ইচ্ছা পোষন করার দরকার নেই। শেষমেষ সে সম্পদ কোন কাজেই আসবে না, কেবলই সত্যিকারের সময় উপলদ্ধিতে নৈতিকতায় সমৃদ্ধ দেশজাতিই হতে পারে সমুন্নত দেশ ও জাতি।
তাঁর জন্ম ২১ ডিসেম্বর ১৮৫৪ সালে। বাবা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী, মা হুরমতজাহান বিবি। তিনি উত্তারিধাকারসূত্রে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও করিমগঞ্জ এলাকায় ৫ লক্ষাধিক একর জমির মালিক ছিলেন। যৌবনে হাসন রাজা কখনো কঠোর বা নির্মম জমিদার ছিলেন না। মনেপ্রাণে তিনি ছিলেন উদার মানুষ। মানুষ দরদী এই কবি ছোটবেলা থেকেই সাধারন মানুষের কাছে কাছে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসতেন। নিজেই গীত রচনার পাশাপাশি গানের সুর তাল, লয় সৃষ্টি করতেন তিনি। সুতরাং জমিদার ও রাজা হাসন রাজা এবং গানের মানুষ তিনি সবার জন্যে ছিলেন প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন। আজো বাংলাদেশে হাসন রাজার গান বাংলা গানের জগতে অনন্য একটি স্থান দখল করে আছে। আজও বাংলা ভাষীদের কাছে তিনি আদরনীয় তাঁর হৃদয়নিংড়ানো গানের জন্যে।
হাসন রাজার বৈষ্ণবীয় পরম প্রেমের ব্যঞ্জনায় এক পরিপূর্ণতা, বৌদ্ধ অহিংস চেতনায় তাঁর মহোৎসব আর সুফি আধ্যাত্মিক ও ভাববাদী চিন্তা জগতে তাঁর নিজের বিলীনতার প্রভাব তাঁকে ব্যতিক্রমী একজন কবি পরিচিতি দিয়েছে। আধ্যাত্মিক মানব চেতনায় আত্ম পরিচয়ের মিশ্রণ ঘটিয়ে পরম স্রষ্টা ও সৃষ্টির মিলন-সত্যকে খুঁজে বেড়িয়েছেন তিনি সারাটি জীবন। মুসলিম, হিন্দু ও অপরাপর ধর্মীয় অনুভূতিতে তিনি মানব-প্রেমের গান গেয়েছেন।
আমি আমার জন্মের পর থেকে হাসন রাজা সম্পর্কে কমবেশী সংক্ষেপে ঐ একই কাহিনী শুনে আসছিলাম নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে যা আজ মনে হয় চিরকালের জন্যে তা-ই সত্য। এতদ্বসত্তেও গবেষনাকাজের সাথে তা-ই পরখ করে দেখি হাসন রাজা বালকমনে কবি। ১৩ / ১৪ বছর বয়সে তিনি মায়ের মুখ থেকে জানলেন মার অতি অল্প বয়স্ক সন্তান এক মেয়ে ও তিন ছেলে বসন্ত মহামারি রোগে প্রান হারান আর বছর দুয়েক পরে তাঁর স্বামী আমীর বকস্ চৌধুরীকে মৃত্যুমূখে চিরকালের জন্যে বিদায় দেন। দিশেহারা হুরমতজান বানু লক্ষনশ্রীর জমিদারী লাভ করেন কিন্তু মনে কোন শান্তি ছিলো না। বড় ভাই ইমদাদ আজিজ চৌধুরী ওরফে তুরন মিঞা বোনকে একরকম চাপাচাপি করে আরেকটি বিয়েতে রাজী করালেন তাঁর প্রথম স্বামীর আপন খালাত ভাই কোউরিয়ার জমিদার আলী রাজার সাথে। হুরমতজান বানুর দ্বিতীয় বিয়ের পর যার জন্ম হয়, তিনি হলেন আমাদের বিখ্যাত মরমি কবি হাসন রাজা। পরবর্তীকালে মায়ের এই কষ্টের কথা জেনে হাসন রাজা দুঃখভারাক্রান্ত হন, মায়ের আপনজন হারানো দুঃখকষ্টগুলো ধারন করেন তাঁর বালক কবি মনের মাঝে। কৈশোর পেরিয়ে মাত্র ১৫/১৬ কুটায় যখন তিনি পা দিলেন, তখনি হাসন রাজার জীবনে এক সুন্দর অনুভূতির ছোঁয়াছ ধরা দিল। পার্শবর্তী হিন্দু জমিদার কন্যাকে দেখে তিনি তখনি মোহাগ্রস্থ হলেন। তিনি মার কাছে আব্দার ধরলেন ‘আমি হিন্দু বুঝি না, মুসলিম বুঝি না, আমাকে ওকে এনে দাও’। কিন্তু দু পরিবারের অভিভাবক পর্যায় থেকে সামাজিক কারনে হাসন রাজার ইচ্ছাপুরনে সায় দেয়নি আর চিরকালের এই অপরিপক্ক প্রেমানুভূতি কিংবা এক মোহাগ্রস্থতায় বিরহী হাসন রাজার প্রেমসায়রে এক পারি জমানোর মতোই যাকে এক পর্যায়ের উত্তরনই বলা চলে। যৌবনের প্রারম্ভেই ১৭ বছর বয়স যখন তার এই পিতৃপরিবারে আসে এক পর্বত-ধ্বস। ১৮৭১ সালে হাসন রাজার বৈমাত্রিক বড়ভাই চলে গেলেন, তার ৪০ দিনের মাথায় বাবা আলী রাজাও পাড়ি জমালেন পরপারে। দুজন অভিভাবক, দুজন আপনজন হারানোয় দিশেহারা অবস্থা হাসন রাজার। এই খবরটি তার গানে খুজে পাওয়া যায়। ১৮৯৭ সালে আসাম সিলেটের বিরাটকায় ভূমিকম্পন সমস্ত আসাম সিলেটকে ধংসযজ্ঞে পরিনত করে। সাথে সাথে হাসন রাজার অন্তরআত্মা কেপে উঠে । হাসন রাজা তার গানে উল্লেখ করেছেন এই সময় তিনি তার পরম প্রেয়সির আবারো নাগাল পান, আবার তার রঙ্গ রুপ দেখে অভিভূত হন। তাকে আবারো জড়িয়ে ধরেন, আর তার মধ্যে বিলীন হন।