হাসন রাজার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি জাদুঘর, যার নাম ‘মিউজিয়াম অব রাজাস’। ২০০৬ সালে রাজাদের পারিবারিক উদ্যোগে নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারের জলারপারে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।
দুই কামরার পুরানো ভবনের বারান্দায় ১০ টাকা দর্শনীর বিনিময়ে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয় জাদু ঘরের মূলকক্ষে। এর আগে, তাঁর বিখ্যাত কোন গানের অডিও আপনার কানে আসবে এবং যতক্ষণ এখানে থাকবেন শুনতেই থাকবেন ‘নেশা লাগিলরে’ মাটির ও পিঞ্জিরার মাঝে’ ‘কানাই তুমি খেইড় খেলাও কেনে’ ইত্যাদি সব বিখ্যাত গান। শুনতে শুনতে বাঁদিকের দেয়ালে চোখে পড়বে জন্ম মৃত্যুর তারিখ লেখা হাসন রাজার (১৮৫৪-১৯২২) ছবি। পশ্চিমের দেয়ালে পরিবারের সদস্যদের নামের তালিকা। এখানে দেশ বিদেশের দর্শনার্থীরা হাসন রাজা ও তার পরিবার সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে প্রতিদিন ভিড় করেন। এখানে আছে হাছন রাজা ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। আছে হাসন রাজা কে নিয়ে লেখা বইপত্র এবং পেপার কাটিংসের সংগ্রহ।
সামনেই চোখে পড়বে রাজ পরিবারের ব্যবহৃত একটি মাঝারি লোহার সিন্দুক। ইতিহাস সচেতন মানুষ হলে আপনি চলে যাবেন অনেক অনেক বছর আগে, যখন এই সিন্দুকই ছিল উচ্চবিত্ত শ্রেণির সম্পদ সংরক্ষনের পারিবারিক ব্যাংক এবং আভিজজাত্য প্রদর্শনের অন্যতম উপাদান। ডানদিকের কাঁচের মাঝারি বাক্সে সংরক্ষিত হাছন রাজা, রাজ পরিবার এবং এ জাদুঘর সম্পর্কে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদন। জাদুঘরে যা দেখতে পাবেন তা হলো, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহিত একতারা, দোতারা, প্লুং বাঁশি ইত্যাদি। আছে হাসন পরিবার ব্যবহৃত, থালা, জগ, প্লেট, কোরআন শরীফ রাখার রেহাল, ইস্ত্রি, সোনা ও রূপার তারের পোশাক, পাকিস্তান আমলের ধাতব মুদ্রা।
জাদুঘরে আপনার নজর কাড়বে হাসন রাজার বড় শখের পোষা কোড়াপাখির নামের তালিকা। তার ছিল কোড়া শিকারের প্রচন্ড নেশা। শিকারী জমিদার হাসন রাজার জীবনের কত বিনিদ্র রজনীইনা কেটেছে আজকের দিনে দুর্লভ এই কোড়া শিকারের নেশায়! আছে তার ৯টি হাতির নামের তালিকা। এদের নাম বেশ অভিজাত। জিবা, জঙ্গ- বাহাদুর, বাংলা বাহাদুর, মাসুকজান, মুকনা, রাজরানী, সুরতজান, মঙ্গলপ্যারি, হাছন প্যারি, ইত্যাদি। আরও আছে হাসন রাজার কাঠের তৈরি বগলা খড়ম, গুড়গুড়ি হুঁক্কা, ঘোড়ার পায়ের কাঠ, সেকালের কয়েকটা ইট, ইত্যাদি। পূর্বদিকের শোকেসে রাখা একতারা, ডোগী, ঢোলক, মৃদঙ্গ, ক্যাসেট এবং অনেক গুলো বাঁশি। হাসন রাজার ব্যবহার করা দুটি জোব্বা (বিশেষ ধরনের পাঞ্জাবী) । পরের কক্ষে আছে হাসন রাজার লেখা গানের বই এবং তাঁকে নিয়ে রচিত অনেক গুলো বই ও লিটল ম্যাগ। এখানে আরও আছে সৈয়দা মিনা রাজা কর্তৃক সংগৃহিত পৌণে ১ ইঞ্চি বাই ১ইঞ্চি কোরআন শরীফ যা পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কোরআন শরীফ গুলোর একটি বলে জানালেন জাদুঘরের একজন স্টাফ। সিলেটের মরমি শিল্পীদের নামের তালিকা সংযুক্তি জাদুঘরটির গুরুত্ব বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে সংস্কৃতিকর্মি ও গবেষকদের কাছে। জাদুঘরটি দেখতে দেখতে আপনার মন অনায়াসে ঘুরে আসবে সেকালের জমিদার বাড়ির সদর অন্দর।