বাংলার মরমি ও লোক সংগীত বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হওয়ার পেছনে যাঁদের অবদান অনস্বীকার্য, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন হাসন রাজা। তিনি তাঁর জীবনের প্রথম দিকে ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী জমিদার। একময় তিনি তাঁর এই বিশাল জমিদারি ত্যাগ করে, গ্রহণ করেন অতি সাধারণ জীবন। আভিজাত্যের চাকচিক্যতা ভুলে সাদাসিধে বৈরাগ্য জীবনে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তাঁরই উদ্যোগে সুনামগঞ্জ হাসন এম ই স্কুল সহ অনেক ধর্ম-প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও তিনি করেন। দরিদ্র মানুষদের জন্য বিলিয়ে দেন নিজের ধন সম্পত্তি। এই সময় স্রষ্টার সন্ধানে নির্জন সাধনায় আত্মনিয়োগ করে জগত সংসার নিয়ে উদাসীন হয়ে যান এবং একের পর এক আধ্যাত্মিক গান রচনা করতে থাকেন, যার সংখ্যাটা প্রায় সহস্রাধিক। তাঁর গানগুলি যেন হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের একটি মিলন ক্ষেত্র। তাঁর জীবন ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, যা অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিশেষভাবে আকর্ষিত করে ছিল। বিশেষ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সহ আরও অনেকেই তাঁর জীবন দর্শনে প্রভাবিত হয়ে ছিলেন। এমনকি ইংল্যান্ডের রাজ দরবারেও এই মরমী সাধকের বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্পটা পৌঁছে গিয়েছিল।
হাসন রাজার দর্শন, গান, সুর, ভাবধারা, প্রচার এবং সংরক্ষনের পাশাপাশি সিলেটের আঞ্চলিক গান, লোকগীতি, পল্লীগীতি সমূহকে সংরক্ষন, প্রচার এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত ভবিষ্যত প্রজন্মের বাংলাদেশীদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে হাসন রাজা পরিষদের মূল উদ্দেশ্য। “বাসভূমি” অস্ট্রেলিয়ার একটি জনপ্রিয় বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল। “বাসভুমি” টেলিভিশনের সতের বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের পাশে থাকতে পেরে হাসন রাজা পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই আনন্দিত। আমরা “বাসভূমি”র উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।
এহসান রেজা, সভাপতি
দেওয়ান সোলায়মান আশরাফী, জেনারেল সেক্রেটারি
হাসন রাজা পরিষদ (অস্ট্রেলিয়া)